আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজার স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। ইসরায়েলের হামলার কারণে যেসব পরিবার আগেই ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, এই ঝড়ে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে উত্তর গাজার বির আন-নাজা এলাকায় বাস্তুচ্যুত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নেওয়া একটি বাড়ি ঝড়ে ধসে পড়লে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
ভোরের দিকে গাজা শহরের রেমাল এলাকায় একটি দেয়াল ভেঙে তাঁবুর ওপর পড়ে আরও দুজন নিহত হন। এর এক দিন আগে শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি স্থাপনা ধসে একজনের মৃত্যু হয়। একই সময়ে আল-মাওয়াসিতে প্রচণ্ড শীতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়।
গাজার চিকিৎসকরা জানান, ঠান্ডা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় মৃত্যু উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আল-শিফা হাসপাতালের একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, গাজা শহরের পশ্চিমে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নয় বছর বয়সী হাদিল আল-মাসরি মারা গেছে; শাতি ক্যাম্পে মারা গেছে শিশু তাইম আল-খাওয়াজা।
খান ইউনিসে টানা বৃষ্টিতে তাঁবুতে পানি ওঠায় আট মাস বয়সী রাহাফ আবু জাজারের মৃত্যু হয়।
দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ইব্রাহিম আল-খালিলি জানান, এই ঝড় অস্থায়ী ও দুর্বল আশ্রয়গুলোকে প্রাণঘাতী ঝুঁকিতে পরিণত করেছে।
কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, আজও বন্যা, ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এতে ৭৬১টি আশ্রয়স্থলে থাকা প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
আল-মাওয়াসিতে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে বহু তাঁবু ভেঙে গেছে, ফলে পরিবারগুলো তাদের অস্থায়ী আশ্রয় হারিয়ে চরম বিপদে পড়েছে। এ ছাড়া উপকূলের বড় অংশ ভেঙে পড়ায়, সমুদ্রের খুব কাছে খাটানো তাঁবুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১০টি বাড়ি ধসে পড়েছে এবং যেকোনো সময় আরও বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শীতকালীন সহায়তা সামগ্রী ঢুকতে বাধা দেওয়ায় অনেক ফিলিস্তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের ভেতরেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ তাদের বিকল্প আশ্রয়ও নেই।
সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা জানান, বির আন-নাজা এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং দুই আহত শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ধসে পড়া বাড়িগুলোর নিচে আরও মানুষ আটকা পড়ে আছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঝড় শুরু হওয়ার পর থেকে জরুরি উদ্ধার দলগুলো চার হাজার ৩০০টির বেশি সাহায্যের ফোনকল পেয়েছে। এ ছাড়া, আগে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ১২টি ভবন ঝড়ের কারণে ধসে পড়েছে বলে তারা নথিভুক্ত করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রায় কোনো সরঞ্জাম বা জ্বালানি না থাকলেও পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স দলগুলো উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, গাজায় জরুরি সহায়তা ও আশ্রয় সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য।
Your Comment